নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলাদেশে রেলওয়েতে দূর্নীতিবাজরাই বর্তমানে পেয়েছেন পদোন্নতি। রেলে সর্বোচ্চ দূর্নীতির আতুরঘর সরাঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর।
এ দপ্তরে কিনাকাটার নামে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। আবার পুর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে লুটপাটকারী প্রধানরাই পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে রেলের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর আশাবুল হক, সরাঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরে আনোয়ার হোসেন, জাহিদ কাওসার, পশ্চিম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হকসহ অনেকেই লুটপাট করেই পেয়েছেন পদোন্নতি।
এসব ঘটনা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশও হয়েছে। লুটপাটকারী কর্মকর্তারা আবারও পেয়েছেন পদোন্নতি। শুধু পদোন্নতি নয়, ফেসে যাওয়া কর্মকর্তারা দূর্নীতি'র টাকায় তাঁরা ম্যানেজ করে ফেলে তদন্ত কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। সম্প্রতি রেলের যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ভুয়া রেকর্ডপত্র বানিয়ে ১ কোটি ৬২ লাখ ৫ হাজার ২৭৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রেলওয়ের পাহাড়তলী কার্যালয়ের ১০ কর্মকর্তা ও দুজন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলা ম্যানেজ করে তারা ঠিকই তাদের পূর্ব অবস্থান বা পদোন্নতি পেয়ে যাবেন। কিন্তু কেনো তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না এ প্রশ্ন এখন জনমনে।
দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আহসানুল কবির পলাশ চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করেন। দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
একটি মামলার এজাহারে আসামি—বাংলাদেশ রেলওয়ের পাহাড়তলী কার্যালয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ রাশেদুল আমিন, প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (পূর্ব) তাপস কুমার দাস, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এম ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির স্বত্বাধিকারী এ এম এম ইকবাল মোর্শেদ।
তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে রেলওয়েকে মালামাল সরবরাহ না করে সরকারের ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অন্য একটি মামলার আট আসামি হলেন, রেলওয়ের পাহাড়তলী কার্যালয়ের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ও বর্তমানে পরিচালক (ইনভেনটরি কন্ট্রোল) প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক (লোকো-মেইন্ট) ও বর্তমানের দিনাজপুরের পার্বতীপুরের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার প্রধান নির্বাহী মো. রফিকুল ইসলাম, সাবেক প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মো. রুহুল কাদের আজাদ, রেল সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পি-২) মো. রাহিদ হোসেন, সাবেক সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পি-২) মো. আনোয়ার হোসেন, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সদর/পূর্ব) মো. এমদাদুর রহমান, সাবেক এডব্লিউএম/ডিএল ও বর্তমানে পাহাড়তলীর ডিজেল শপের কর্মব্যবস্থাপক (ডিজেল) এতেসাম মো. শফিক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম/এস দ্য কসমোপলিটন করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী নাবিল আহসান।
তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা মালামালের পরিমাণ ও কাগজপত্র পরিবর্তন করে মালামাল ক্রয়ের ভুয়া রেকর্ডপত্র তৈরি করে সরকারের ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৭২৩ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়ের সর্বশেষ অডিট প্রতিবেদনে রেলওয়ের এই অনিয়ম, দুর্নীতির নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলওয়েতে চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে বাজারমূল্য থেকে বেশি দরে একের পর এক যন্ত্রপাতি ক্রয় সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদারের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি মেরামত করে ২০১৯–২০ এবং ২০২০–২১ অর্থবছরে ৫ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা লোপাট করেছেন রেলওয়ের পার্বতীপুর, সৈয়দপুর ও পাহাড়তলী কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অনেক অডিট আপত্তি এখনো নিষ্পত্তি করেননি বলে জানা গেছে। বর্তমানে সরাঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর পশ্চিম ও পূর্ব রেলওয়ে অঞ্চলের সর্বোচ্চ পদধারী হলে আরেক দূর্নীতিবাজ বেলাল হোসেন সরকার। পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের সিওএস থাকা ব্যাপক লুটপাট করে বর্তমানে তিনি দুই অঞ্চলের প্রধান সিসিওএস হিসাবে চট্টগ্রামে কর্মরত। এ বেলাল হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে। তদন্তের মাধ্যমের তার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় তাকে সে সময় বরখাস্ত করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এরপর থেকেই ঊধাও হন তিনি। কানাডার বেগম পাড়ায় তার পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন উঠেছিলো সে সময়। ২০২১ সালের ওই ঘটনার কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে সকলকে ম্যানেজ করে ঢাকা রেল ভবনে ছিলেন তিনি। প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার সিওএস-কন্ট্রোলার অব স্টোরস অফিস (পূর্ব) বাংলাদেশ রেলওয়ের সিওএস (পশ্চিম) হিসেবে রাজশাহীতে থাকাকালে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের পণ্য ক্রয়ে আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অডিট ও আইসিটি) ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাসের তদন্ত টিম সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, ক্রয় করা পণ্য এবং বাজার থেকে সরেজমিন সংগৃহীত পণ্যের নমুনার বাজারদর যাচাই এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি বিবেচনাপূর্বক তদন্ত করে বেলাল হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পায়।
দপ্তরটিতে যখন যে দ্বায়িত্ব পায় তখন তার পোয়াবার। রেলওয়ের অনেকগুলো তালিকাভুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু মালামাল সরবরাহের জন্য বরাবর তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠান দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে এ লুটপাট করা হয়। এ ছাড়া দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া তাদের পছন্দের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর দর থাকে অনেক বেশি। বর্তমানে ইজিপি'র নামেও চলছে ভাওতাবাজি। এ ভাওতাবাজিতে পছন্দের ঠিকাদারকে আগেই কোটেশন বলে দেওয়া হয়। এভাবেই পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে কেনাকাটায় দূর্নীতিবাজরা বহাল থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
জানতে চাইলে প্রধান সরাঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বেলাল হোসেন সরকার বলেন, এসব মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ। আগেও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্র হয়েছে। এসব তদন্ত চলমান আছে।
কথা বললে মহাপরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, স্টোর ক্যাডারে যেসকল পদ আছে সেসকল পদে তাঁরা ছাড়া অন্য কাউকে দেওয়ার সুযোগ নাই। তাঁদের মধ্যে থেকেই দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁদের প্রোমোশন দেওয়া হয়নি চলতি দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যক্তির প্রস্তাব আমার আগের ডিজি'র আমলে হয়েছে। অর্ডারটি আমার আমলে হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ ও মামলা তদন্ত হচ্ছে।